হোম অটোমেশন কি?
প্রথমেই জেনে নেই অটোমেশন সম্পর্কে, ইহা হার্ডওয়্যার ডিভাইস, সফটওয়্যার, ইন্টারনেট ও মেধার সমন্বয়ে তৈরি একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় বলে একে অটোমেশন সিস্টেম বলা হয়। আর এই সিস্টেম যখন বাসাবাড়িতে ব্যবহার করা হয় তখন তাকে হোম অটোমেশন বলা হয়। যেমনঃ যেকোনো জায়গা থেকে অ্যাপের মাধ্যমে বাসায় লাইট ফ্যান নিয়ন্ত্রণ করা, বাসায় আশেপাশে লাইভ ভিডিও দেখা ও ফুটেজ সংরক্ষণ করা কিংবা আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের অফিসে খবর পৌঁছানো সেই সাথে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাৎক্ষণিক চালু হওয়া।
অটোমেশন শুধু বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত হয় তানা এটা কারখানায়, অফিসে অথবা লাইব্রেরিতেও ব্যাবহার হতে পারে। যেমন ধরুন রোবট ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করা, একজন কর্মীর আসা যাওয়া এক্সেস কন্ট্রোল করা কিংবা লাইব্রেরিতে অসংখ্য বইয়ের সঠিক হিসাব রাখা এছাড়া কোন পাঠকের কাছে কোন বই আছে কবে জমা দিবে তা ম্যাসেজ দিয়ে জানানো ইত্যাদি।
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ তাদের বসবাসের স্থানকে সবথেকে নিরাপদ করার লক্ষে উন্নত ও আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করছে। প্রযুক্তির ছোঁয়া শহুরে পরিবেশের সাথে গ্রামীন জীবনেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। আর তাই home automation খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
কিভাবে হোম অটোমেশন জীবনকে সহজ করেছে?
অনেক সময় আমরা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় লাইট, ফ্যান অফ করতে ভুলে যাই, যার কারনে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিলের বিশাল অংকের টাকা খেসারত দিতে হয়। তাছাড়া অনেক সময় বাসা বাড়িতে চুরি ডাকাতির মত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যায়। হোম অটোমেশন অবস্থিত স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আপনার তথ্য জরুরি সহায়তা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিবে। এমতাবস্তায় আসন্ন বিপদ থেকে অনেক সময় পরিত্রান পাওয়া সম্ভব হয়। হোম অটোমেশন সম্পর্কে এমন কার্যকরি কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ ফিচার নিচে তুলে ধরা হলঃ
১. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
সারাদিন কাজ করে বাসায় ঢুকতেই যদি দেখা যায় এসি অন হয়ে আগেই ঘর ঠান্ডা হয়ে রয়েছে তাহলে কেমন হয়। এটা বাস্তবে পরিনত করেছে হোম অটোমেশন সিস্টেম। পেছনের গল্পটা হচ্ছে, আপনার অবস্থান আগে থেকে সনাক্ত করে ৫ মিনিট আগেই এসি চালু হয়েছে যে কারনে রুম আগেই ঠান্ডা হয়ে আছে।
২. বিদ্যুৎ অপচয় রোধ
কখনো কখনো কিছু এপ্লায়েন্স চালু রেখেই যখন কেউ বাসা থেকে বের হয়ে যায় ফলে বিদ্যুৎ খরচ বাড়তে থাকে। এমতাবস্থায় মোশন ডিটেকশন সেন্সর ফিচার যুক্ত হোম অটোমেশন সিস্টেম বুঝতে পারে বাসায় কেউ নেই আর তাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে এপ্লায়েন্স গুলো বন্ধ করা প্রয়োজন। এভাবে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করা যায়।
৩. পানি অপচয় রোধ
সৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সকল কাজে পানির ব্যবহার অপরিসীম। দৈনন্দিন প্রায় সকল কাজে পানির ব্যবহার অনস্বীকার্য। প্রায় সময় আমাদের বাসা বাড়িতে পানির অনেক বেশি অপচয় দেখা যায়। হোম অটোমেশন এর মাধ্যমে পাম্প অটোমেশন পানির ট্যাংকি তে পানির উপস্থিতি ও ওভারফ্লো পর্যবেক্ষণ করে থাকে যার ফলে পানির অত্যধিক অপচয় অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
টেকশপ বাংলাদেশ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যাবহার করে তৈরি করেছে
Automatic Water Pump Controller যেটি ব্যাবহার করে খুব সহজে পানি ও বিদ্যুতের অপচয় রোধ করা যায়। ডিভাইসটি কিভাবে ব্যাবহার করতে হবে তা জানতে
এই পোস্টটি পড়ুন।
৪. স্মার্ট সুচিং
স্মার্ট সুচিং হল অটোমেশনের আরও একটি নিরাপদ ফিচার। মনে করুন আপনার রুমে লাইট, ফ্যান, এসি, টিভি সহ আরও কিছু ডিভাইস আছে যা মোবাইলের অ্যাপের মাধ্যমে বন্ধ করা বা চালু করতে চাচ্ছেন। এই কাজটিও সন অফ ওয়্যারলেস স্মার্ট সুইচ ব্যবহার করে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটির মাধ্যমে দূর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে যদি ইন্টারনেটে যুক্ত করা হয়।
৫. সুরক্ষা ব্যবস্থা
আজকাল বাসা বাড়ির সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য তালাচাবির দরকার পড়ে না। হোম অটোমেশন এর মাধ্যমে খুব সহজেই ডোর লক/আন-লক ব্যবস্থা করা যায় Door Lock System ডিভাইসটি ব্যবহার করে। ফলে অযাচিত তালাচাবি হারানো ঝামেলা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। অনেকসময় ছোট বাচ্চারা বাড়িতে অবস্থানকালে ভুলবশত দরজা লক করে দেয় ফলে অভিভাবকদের জটিল সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। এ ধরনের ঝামেলা থেকে পরিত্রাণ পেতে হোম অটোমেশন অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৬. ইন্টারকম
আপনি বাড়িতে থাকুন কিংবা বাইরে থাকুন, ইন্টারকমের মাধ্যমে আপনার স্মার্ট ফোন কিংবা কন্ট্রোল টাচ স্ক্রিনের মাধ্যমে আপনার বাড়ির যেকোনো রুমের পর্যবেক্ষণ ও যোগাযোগ করতে পারবেন। বাড়িতে আপনার বাচ্চারা আপনার ফোনের উত্তর দিচ্ছে কিনা বা বাসায় কোনো অতিথি এসেছে কিনা তা পরীক্ষা করা যায়। এছাড়া আপনার বাড়ির সামনের দরজায় কেউ অপেক্ষা করছে কিনা তার সকল তথ্য ইন্টারকমের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। ইন্টারকম যেকোনো জায়গা থেকে আপনার বাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাকে জানান দিবে।
৭. হাউজ এলার্ম
অনেক সময় কোনো ভবনের গ্যাস, বিদ্যুৎ বা পানির লাইনের ক্ষেত্রে লিকেজ থাকে যা বড় কোনো দুর্ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে। হাউজ এলার্ম তৎক্ষণাৎ ভবন মালিকের নিকট ইমারজেন্সি এলার্ম প্রেরণ করে থাকে। ফলে সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু হয়ে যায় যা বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে।
৮. বাসাবাড়ি পর্যবেক্ষণ
বর্তমান সময়ে বাবা – মা উভয় চাকুরীজীবী হওয়ার দরুন অধিকাংশ সময় তারা বাচ্চাকে একা বাসায় রেখে যায়। হোম অটোমেশন এর মাধ্যমে সিসি টিভি ফুটেজ দেখে বাচ্চাদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা সহজ হয়ে যায়। এছাড়াও বাসায় হঠাৎ কারো আগমন হয়েছে তার যাবতীয় ইনফরমেশন হোম অটোমেশন এর ডিটেকশন ক্যামেরা ও প্রযুক্তি গুলো মাধ্যমে মালিকের নিকট সকল তথ্য প্রদান করে থাকে।
৯. অজাচিত অনুপ্রবেশ রোধকরণ
মোশন ডিটেকশন লাইটিং ও মোশন ডিটেকশন অ্যালার্ম ব্যবহারের ফলে যথা সময়ে পুলিশ এবং বাড়ীর মালিকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় ফলে সহজেই চুরি-ডাকাতি রোধ করা যায়।
মোট কথা বর্তমানে বাসা বাড়িতে হোম অটোমেশন এর মত প্রযুক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। অনেক জটিল ও সময় সাপেক্ষ কাজগুলোকে এর মাধ্যমে খুব সহজেই সমাধান করা যায় এভাবেই হোম অটোমেশন প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে আরও সহজ ও উপভোগ্য করে তুলেছে। আশাকরি এই আর্টিকেলটি পড়ে অটোমেশন সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়েছেন, এরকম আরও বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।]]>