সায়েন্স প্রোজেক্টে জনপ্রিয়তার শীর্ষে যেই বোর্ড!

আরডুইনো কী? ২০০৫ সালে ম্যাসিমো ব্যাঞ্জি এবং ডেভিড কুয়ার্টিলেস, ইতালির ইন্টারঅ্যাকশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট, আইভরিয়াতে ইন্টারেক্টিভ আর্ট ডিজাইন প্রকল্পের জন্য সহজে ব্যবহারযোগ্য একটি প্রোগ্রামেবল ডিভাইস তৈরি করার কথা চিন্তা করেন। যা খুব সহজে যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে। এমনকি যারা বিভিন্ন পেশার মানুষ, যাদের ইলেকট্রনিক্স নিয়ে জানাশোনা কম তারাও ব্যবহার করতে পারবেন। আর এ চিন্তা থেকেই আরডুইনোর জন্ম! আরডুইনো আসলে একটি মাইক্রোকন্ট্রোলার বেজড ওপেন সোর্স প্লাটফর্ম। প্লা্টফর্মটি তৈরি হয়েছে, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার দিয়ে। অর্থাৎ আমরা যে বোর্ডটি ব্যবহার করি সেটি হচ্ছে আরডুইনো হার্ডওয়্যার আর বোর্ডে থাকা আইসি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ যে সফটওয়্যারের সাহায্যে ফাংশনাল হয় সেটিই ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। মাইক্রোকন্ট্রোলার কী তাই ভাবছেন তো? মাইক্রোকন্ট্রোলার একটি মিনি কম্পিউটার বলতে পারেন। একে আসলে সিঙ্গেল চিপ মাইক্রোকম্পিউটার বলা হয়ে থাকে। কারণ এতে কম্পিউটারের সকল মৌলিক বৈশিষ্ট্যই রয়েছে। কম্পিউটারের মতো এতেও হয়েছে স্টোরেজ, র‍্যাম, ইনপুট এবং আউটপুট সিস্টেম! পার্থক্যটা হচ্ছে এটি কম্পিউটার থেকে খুব ছোট এবং অনেক কম প্রসেসিং ক্ষমতা সম্পন্ন। কী খুব হেলাফেলা করার মতো কিছু মনে হচ্ছে? মনে রাখবেন চাঁদে মানুষ নিয়ে যাওয়া মিশনে Apollo Guidance Computer এ ছিল মাত্র ৭২ KB স্টোরেজ এবং ৪.০৯৬ KB র‍্যাম!   আর অন্যদিকে, ওপেন সোর্স বলতে বোঝায় যে সফটওয়্যারটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে এবং সফটওয়্যার ও এর কোড ও সবার জন্য উন্মুক্ত। যেকারণে এটিকে বলা হয় ওপেন সোর্স। মজার ব্যাপার হচ্ছে আরডুইনোর হার্ডওয়্যার ও ওপেন সোর্স। তবে ওপেন সোর্স মানে ফ্রিতে আপনি আরডুইনোর যন্ত্রাংশ পাবেন তা নয়। বরং যন্ত্রাংশ বা আরডুইনো বোর্ডটির ডিজাইন ও এতে ব্যবহৃত কম্পোনেন্টের তথ্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। অর্থাৎ আরডুইনোর সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সম্পূর্ণ এবং এতে ‘ফ্রি কিন্তু শর্ত প্রযোজ্য’ টাইপের কোনো লুকোছাপাও নেই। যে কেউ যেকোন সময় চাইলেই তা এক্সেস করতে পারবেন। আরডুইনো ওপেন সোর্স হওয়ার কারণে অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্রান্ড নেইম এবং লোগো দিয়ে আরডুইনোর হার্ডওয়্যার ডিজাইন এবং সফটুয়্যার ব্যবহার করে নিজেদের পণ্য তৈরি ও বাজারজাত করতে পারে। আরডুইনোর ব্যবহার-৩ বর্তমানে বেশ কিছু ধরনের আরডুইনো বাজারে পাওয়া যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো –

ধরন অনুযায়ী এসকল আরডুইনোর ইনপুট এবং আউটপুট পিনের সংখ্যা ভিন্নভিন্ন হয়ে থাকে। এছাড়া সার্কিটের সাইজ ও জটিলতার ধরণেও পার্থক্য দেখা যায়। তবে শুরু করার জন্য আরডুইনো উনো সঠিক পছন্দ।

কোথায় আরডুইনো ব্যবহার করা হয়?

আরডুইনো যদিও অনেকটা কম্পিউটার মতোই ইনপুট -> প্রসেস -> আউটপুট বেসিসে কাজ করে, কিন্তু এদের কাজের ক্ষেত্র অনেকটাই ভিন্ন। ধরা যাক, আপনি আরডুইনো ব্যবহার করে একটি স্বয়ংক্রিয় দরজা খোলা এবং বন্ধ করার সিস্টেম তৈরি করবেন। এক্ষেত্রে আরডুইনোর ইনপুট পিনে আপনাকে একটি মোশন সেন্সর যুক্ত করতে হবে যা দরজার সামনে ব্যক্তি বা বস্তুর উপস্থিতি নির্ণয় করবে। আর অন্যদিকে আউটপুট পিনে আপনাকে একটি মোটর যুক্ত করতে হবে, যা বস্তুর উপস্থিতিতে দরজা খোলা এবং বন্ধের কাজ করবে। আরডুইনো বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত। এটি ব্যবহার করা হয় –
    • প্রযুক্তির শিক্ষায়
    • সৌখিন ইলেকট্রনিক কাজকর্মে
    • কোন প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টের প্রোটোটাইপ ফেজে
    • প্রোটোটাইপ এবং খেলনা রোবট তৈরির ক্ষেত্রে
    • রিমোট চালিত গাড়ি তৈরীর ক্ষেত্রে
    • রিমোট চালিত ড্রোন তৈরি ক্ষেত্রে
    • আইওটিতে (IOT)
    • স্মার্টহোম তৈরীর ক্ষেত্রে
    • ভয়েস  নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রিক বাল্ব বা ফ্যান তৈরির ক্ষেত্রে
আরডুইনোর ব্যবহার-৪ এছাড়া আরো অগণিত স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমে আরডুইনো ব্যবহার করা হয় বা করা যায়। আমাদের দেশে স্কুল-কলেজের বিজ্ঞান প্রজেক্টেগুলোতে এবং বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রজেক্টে আরডুইনো ব্যবহৃত হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে পৃথিবী এগিয়ে চলছে অদম্য গতিতে। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ ও! আর এগিয়ে যাওয়ার যাত্রায় শামিল হয়েছে শিক্ষার্থীরাও! আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যত তো তাদের হাতেই! আর সে কারণেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রায় প্রত্যেক বছরই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে স্কুল এবং কলেজ লেভেলে আয়োজন করা হয়ে থাকে বিজ্ঞান মেলার। এ সকল মেলায় দেখা যায় আরডুইনো ব্যবহার করে তৈরি করা বিভিন্ন আকর্ষণীয় প্রজেক্ট। চাইলে যে কেউ আরডুইনো ব্যবহার করে তৈরি করতে পারে অটোমেশন বেজড বিভিন্ন প্রজেক্ট। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স নিয়ে সৌখিন লোকজনও আরডুইনো ব্যবহার করে ঘরে বসেই তৈরি করতে পারেন বিভিন্ন প্রজেক্ট। বিভিন্ন প্রজেক্ট এর প্রোটোটাইপ তৈরিতে আরডুইনোতে ভরসা রাখতে পারেন চোখ বন্ধ করে।

আরডুইনো বেসড মজার কিছু প্রোজেক্ট

আরডুইনো দিয়ে তৈরি রোবট আর্মঃ এ প্রজেক্টে আরডুইনো দিয়ে রোবট আর্ম বা হাত তৈরি করা হয়। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ, যাদের একটি হাত নেই বা হাতে কোন ধরনের সমস্যা আছে, তারা এ ধরনের রোবট আর্ম ব্যবহার করতে পারেন। স্মার্ট হোমঃ আরডুইনো এবং বিভিন্ন ধরনের সেন্সর ব্যবহার করে স্মার্টহোম তৈরি করা যায়। যেমন, স্মার্ট হোমের সিকিউরিটির জন্য মোশন সেন্সর ব্যবহার করা যেতে পারে, তাপমাত্রার ওঠানামার সাথে বৈদ্যুতিক ফ্যানের চালু এবং বন্ধ করার জন্য তাপমাত্রা ভিত্তিক সেন্সর ব্যবহার করা যেতে পারে। দিন এবং রাতে ঘরের লাইট স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু এবং বন্ধ করার জন্য লাইট সেন্সিং সেন্সর ব্যবহার করে ঘরের লাইট জালানো বন্ধ করা যেতে পারে। এভাবেই একটি সাধারন ঘরও হয়ে উঠতে পারে স্মার্ট হোম! আরডুইনোর ব্যবহার-২ কৃষি ক্ষেত্রেঃ জমিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেচ প্রদানের জন্য বিভিন্ন সেন্সর যুক্ত করে ব্যবহার করা যেতে পারে আরডুইনো। সেন্সর যখনই ফসলের জমিতে পানির অভাব বুঝতে পারবে তখনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোটর চালু হয়ে জমিতে সেচ দিবে। এছাড়া রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি বা ড্রোন সহ আরো নানা প্রজেক্টে ব্যবহার করা যায় আরডুইনো। আমাদের ব্লগে ইতিমধ্যে আরডুইনো ভিত্তিক কিছু প্রোজেক্ট টিউটোরিয়াল করা আছে দেখতে ভিজিট করুন এখানে।

প্রজেক্ট তৈরিতে আরডুইনো কেন গুরুত্বপূর্ণ?

  • এক্ষেত্রে সবার প্রথমেই আরডুইনোর যে বৈশিষ্ট্যটি উল্লেখ করা প্রয়োজন তাহলো সহজলভ্যতা। আরডুইনোর বিকল্প হিসেবে যে সকল ইলেকট্রিক পণ্য রয়েছে তা বেশিরভাগই সহজলভ্য নয়। তাই অন্য সকল বিকল্প কে হটিয়ে প্রথম জায়গাটি আরডুইনো দখল করে নেয়।
  • সহজলভ্য হওয়ার পাশাপাশি আরডুইনো ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ এবং ঝামেলা মুক্ত। C, C++ এর মতো কিছু প্রচলিত সহজ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানলেই সহজে আরডুইনো প্রোগ্রামিং করা যায়। আরডুইনো প্রোগ্রাম করার জন্য বেশী ঝামেলা পোহাতে হয় না কারণ অধিকাংশ প্রচলিত অপারেটিং সিস্টেমেই (Windows, Linux, MacOS) আরডুইনোর সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়। আরডুইনো সফটওয়্যারের ইউজার ইন্টারফেসও অনেক সহজ যা হাই স্কুলের বাচ্চারাও ব্যবহার করতে পারবে।
  • আরডুইনো ওপেনসোর্স হওয়ার সুবিধা অনেক। এছাড়া আরডুইনো সার্কিট বোর্ড এর মূল্য অনেক কম। তাই সকলেই এটি কেনার সামর্থ্য রাখে ।
  • শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি বহুল ব্যবহৃত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্যও সুবিধা। দাম সামর্থের মধ্যে হওয়ায় এটি ব্যবহার করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তৈরি করতে পারে বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক যন্ত্র। এভাবে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন এর বিভিন্ন নীতি প্রমাণের ক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আরডুইনো বেশ কাজে আসে।
  • যাদের প্রোগ্রামিংয়ে মাত্রই হাতে খড়ি হয়েছে বা যারা রোবটিক্সে বেশ আগ্রহী তাদের জন্য তো আরডুইনো আরো বেশি কাজে আসবে কারণ এটি তাদের শেখার প্রক্রিয়াকে আরো আনন্দদায়ক করে তুলবে। এছাড়া শিক্ষার্থী যখন আরডুইনো ব্যবহার করে তখন সে দ্রুত শিখতে পারে। কারণ তখন তার শেখার ও জানার আগ্রহ আরো বহুগুণ বেড়ে যায়।
  • ডিজাইনার এবং আর্কিটেক্টরা তাদের প্রজেক্টের প্রোটোটাইপ তৈরি করার জন্য সাহায্য নিতে পারে আরডুইনোর। আরডুইনো ব্যবহার করে তারা তাদের প্রোজেক্টের সমস্যা চিহ্নিতকরণ, সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পারেন খুব সহজেই।
  • অটোমেশন প্রজেক্ট গুলোতে আরডুইনোর বিকল্প একমাত্র আরডুইনোই। কারণ সহজলভ্যতা দাম ব্যবহারযোগ্যতা সবদিক দিয়েই আরডুইনো পেছনে ফেলবে বাকি সকল বিকল্পকেই।
বিভিন্ন প্রকার আরডুইনো খুব সহজেই ঘরে বসে ক্রয় করতে পারেন টেকশপ বাংলাদেশ থেকে। এছাড়া আরডুইনো ব্যবহার সম্পর্কে বাংলা টিউটোরিয়ালও পেয়ে যাবেন টেকশপ বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে! তাহলে আর দেরি কেন! আপনার পরবর্তী প্রোজেক্টে আরডুইনোকে সাথে নিতে অর্ডার করে ফেলুন এখনই!  ]]>

TSBlog
TSBlog

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.